ডায়াবেটিস কি?
প্রথমেই,
ডায়াবেটিস কি জানা যাক। ডায়াবেটিস হল একটি রোগ যা আপনার রক্তে শর্করা
(গ্লুকোজ) স্তর বাড়িয়ে দেয়। এই বিষণ্ন রোগটি কম কথায় সংক্ষেপে
সম্পর্কে বললে, ডায়াবেটিস হল রক্তে গ্লুকোজ স্তরের অতিরিক্ত পরিমাণ থাকা। এই
রোগের দুই ধরন আছে: টাইপ ১ ডায়াবেটিস এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস। টাইপ ১ ডায়াবেটিস একটি
অটোইমিউন রোগ যার কারণে প্যানক্রিয়াসের ইনসুলিন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে
টাইপ ২ ডায়াবেটিস হল শরীরের ইনসুলিন প্রভাবিত হওয়ার কারণে রক্তে শর্করার স্তর
উচ্চে থাকে।
কেন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ?
ডায়াবেটিসনিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন তবে এটি আপনার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। ডায়াবেটিস
অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকলে রক্তে গ্লুকোজের অতিরিক্ত পরিমাণ থাকে এবং এটি কখনোই
ভাল নয়। আপনার
শরীর গ্লুকোজ ব্যবহার করতে না পারলে এটি আপনার ক্ষতিগ্রস্ত অংশের উপর
প্রভাব ফেলতে পারে। আপনি মাঝে মাঝে ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণ করলে রক্তে গ্লুকোজের স্তর নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং দীর্ঘমেয়াদী কোন
কমপ্লিকেশন হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এখন সহজ:
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করাবিশেষ কঠিন নয়, কিন্তু এটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং পরিক্রমার উপর নির্ভর করে। আপনি
কিছু পরিকল্পনা ও কয়েকটি বিষয় মেনে চললে আপনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
ইনসুলিন নেওয়া:
টাইপ
১ ডায়াবেটিসের জন্য ইনসুলিন হল সবচেয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা। এটি শরীরের প্রয়োজনীয়
ইনসুলিন সরবরাহ করে এবং এটি শরীরে রক্তে গ্লুকোজ প্রবেশ করতে সাহায্য করে। টাইপ
১ ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ইনসুলিন ব্যাতিত অন্যান্য ঔষধ দিয়ে কন্ট্রোল সম্ভব নয়। ইনসুলিন
এর পরিকল্পনা ডাক্তার দ্বারা নির্ধারিত হবে।
আপনার খাবারের অভ্যাস:
আপনার খাবারের নিয়ম হওয়া
উচিত প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় সুষম খাবার
নির্বাচন করা এবং এগুলি নিয়মিত খেতে হবে। খাবারে সবচেয়ে বেশি
প্রয়োজনীয় মৌলিক পুষ্টি উপস্থিত থাকা উচিত। আপনার খাবারে যেমন সবজি ও ফল
প্রয়োজন, তেমনি প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটও থাকতে হবে। বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ফলে
খুব কম কার্বোহাইড্রেট থাকে তাই এটি ভালো পরিমানে খাওইয়া যায়। কম খেতে হবে স্টার্চ ও সুগার যেখানে থাকে বেশি কার্বোহাইড্রেট
এবং একইভাবে আপনার খাবারে মধু এবং শরবত কম করতে হবে।
আপনার শরীরের ওজন কমাতে আপনার সাপেক্ষে কম কার্বোহাইড্রেট গ্রহন করলে আপনি
অবশ্যই উপকৃত হবেন।
ফিজিক্যাল
এক্সারসাইজ আপনার শরীরের ওজন ও
ইনসুলিনের উত্পাদন নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। আপনি ওয়াকিং, বাইক রাইডিং এবং এলিপ্টিকাল মেশিন
ব্যবহার করে প্রতিদিন মিনিমাম ৩০ মিনিট ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ করতে পারেন।
এছাড়াও,
একটি সম্পূর্ণ ও সঠিক ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনার জন্য অবশ্যই ডায়াবেটিস
পরীক্ষা করা উচিত। ডায়াবেটিস
পরীক্ষা বাসায় বসেই মেশিনের মাধ্যমে করা যায়। এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শে OGTT অথবা
HBA1C পরীক্ষা করা যেতে পারে।
যখন আপনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পরিকল্পনা করেন, তখন আপনার কিছু সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন হবে। একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যের রুটিন অনুসরণ করতে হবে এবং প্রতিদিন পর্যবেক্ষণ করতে হবে যেমন খাদ্যের পরিমান, খাবারের সময় এবং ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ এর সময়।
একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল
ইনসুলিন ব্যবহার করা। ডায়াবেটিস টাইপ ১ রোগীদের জন্য ইনসুলিন সরাসরি
নির্ধারিত পরিমানে ব্যবহার করা প্রয়োজন। ডায়াবেটিস টাইপ ২ রোগীদের
জন্য ইনসুলিন প্রয়োজন না ও হতে পারে , তবে একটি স্থিতিশীল জীবনযাপন এবং খাদ্য ও
ফিজিক্যাল এক্সারসাইজের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।এক্সারসাইজ
করা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি ফিজিক্যাল
এক্সারসাইজ করতে না পারেন তবে দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং গতি বাড়ানোর জন্য একটি ব্রিস্ক
স্ট্রলিং আপনার জন্য পর্যাপ্ত হতে পারে। স্ট্রলিং
একটি সহজ এবং বেশ ফলপ্রসূ পদক্ষেপ। যেমন কাজের পথে হাঁটা, আশেপাশের দোকানে এবং
এলাকার চারপাশে হেঁটে ঘুরা। এভাবে আপনি আপনার ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এবং অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারেন।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ইনসুলিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সমস্যা হল ইনসুলিন গ্রহনের পরিমাণ। ইনসুলি এর পরিমাণ ডায়াবেটিস এর প্রকার ও রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। কিছু ক্ষেত্রে, একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ইনসুলিন একটি প্রয়োজনীয় উপাদান হতে পারে যেমন প্রথম ধাপের ডায়াবেটিস, ( টাইপ ১ ডায়াবেটিস) এবং কিছু ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তা আছে দ্বিতীয় ধাপের ডায়াবেটিস,( টাইপ ২ ডায়াবেটিস)।
একজন ডায়াবেটিস রোগীর
ইনসুলিন নির্দেশনা দেওয়ার আগে, রোগীর
সম্পূর্ণ শারীরিক পরীক্ষা করা উচিত। এছাড়াও রোগীকে ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণ করার উপযুক্ত পরামর্শ দেওয়া হয়, যেমন নিরাপদ এক্সেরসাইজ, প্রতিদিনে
মাত্রা গণনা এবং প্রতিদিনে খাদ্য রুটিন এর উপর লক্ষ্য রাখা।
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ হল রোগীর শরীরের শুধুমাত্র সঠিক রক্তচাপ স্তর
নির্ধারণ করা। এটি
রোগীর জীবনের মানসিক এবং শারীরিক অবস্থার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। রোগীর
রক্তচাপ স্তর নির্ধারণের সাথে সাথে রোগী যদি রক্তশর্করা বা অধিক রক্তচাপ এ ভুগে
থাকেন, তবে তাঁকে সতর্ক থাকতে হবে কারণ এটি রোগীর জীবনে মারাত্মক সমস্যা হিসাবে
পরিণত হতে পারে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার
জন্য কি কি করা হয়?
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার
জন্য কিছু পরামর্শ নিম্নরূপ।
১। প্রতিদিন ব্যায়াম করুন। প্রতিদিন
কমপক্ষে 30 মিনিট ব্যায়াম করা হলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য খুবই সহায়ক্
হয়। আপনি
যখন চাইবেন তখন ব্যায়াম করতে পারেন।যেমন খাবারের আগে ও পরে । আপনি
স্ট্রলিং, সাঁতার ও দৌড় করতে পারেন। আপনি যেকোনো ব্যায়াম করতে
পারেন যা আপনার পছন্দ।
২। পরিমিত
খাবার খাওয়া হলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়ে যায়। আপনি
আপনার পরিমিত খাবারের মাত্রা বাড়ানোর চেষ্টা করতে পারেন। সম্ভবত আপনার ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে ।
৩। আপনার ওজন কমানো উচিত। ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আপনার ওজন নির্ধারিত মাত্রায় থাকা উচিত। একটি
স্বাস্থ্যকর ওজন প্রতিদিন পরিশ্রম করতে সাহায্য করে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
করতে সাহায্য করে।
৪। আপনার
রক্তচাপ নিরধারিত রাখা হলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়ে যায়। রক্তচাপ
নির্ধারণ করার জন্য আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলতে হবে। ডাক্তার আপনাকে কিছু পরামর্শ
দিয়ে রক্তচাপ নির্ধারণ করবেন এবং যদি প্রয়োজন হয় তবে আপনাকে ওষুধ সেবনের
পরামর্শ দিয়ে থাকতে পারেন।
৫। ডাক্তার আপনাকে আপনার
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে পরামর্শ দেবেন এবং সাধারণত ব্লাড সুগার লেভেলস
মাপার জন্য আপনাকে বলবেন এবং আপনাকে পরামর্শ দেবেন যে কীভাবে আপনাকে আপনার সুগার
লেভেল মেইন্টেইন করা উচিত।
৬। ডায়েবেটিস
সম্পর্কিত অধিকতর
মানসিক চাপ আপনার অনুভুত হতে পারে। ডায়াবেটিস সংক্রান্ত মানসিক
চাপ কমাতে আপনার পরিবারের সাথে কথা বলতে হবে এছাড়াও সামাজিক পরিবেশে একটি সম্পূর্ণ
ও স্বাস্থ্যকর জীবন পরিচালনা করা উচিত। আপনার দৈনন্দিন জীবনে
শারীরিক কাজগুলি করা উচিত, যেমন মাঠ দৌড়, হাইকিং এবং জীম।
সংক্ষেপঃ ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রন করা কঠিন নয়। সঠিক খাবার ও পানীয় নেওয়া, নিয়মিত শারীরিক
কাজ এবং দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা দূর করার জন্য পরামর্শ মেনে চলা আপনার ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করবে। আপনি একটি সম্পূর্ণ ও
স্বাস্থ্যকর জীবন পরিচালনা করতে চাইলে আপনার ডাক্তারের সাথে নিয়মিত কথা বলুন এবং
রোজ চেকআপ করার জন্য সময় নিন। এছাড়াও যদি আপনি কোন
সমস্যার সম্মুখীন হন তবে আপনার ডাক্তারের সাথে তা আলাপ করুন এবং তা সম্পর্কে জেনে
নিন।
0 Comments